চাল আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্তটি একদিকে যেমন ইতিবাচক উদ্যোগ, তেমনি খানিকটা স্পর্শকাতরও। এর মধ্যে কৃষকের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি যেমন নিহিত থাকে, পাশাপাশি বিবেচনাযোগ্য সাধারণ ভোক্তাদের দিকটিও। চলতি বছর বাম্পার ফলন হলেও বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই শুরুর আগে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। আড়তে আগে থেকেই আমদানিকৃত চাল মজুদ থাকায় কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। চাল আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণের মাধ্যমে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হোক। তবে এর সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে বাজারে চালের দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার দিকেও। রোজা উপলক্ষে এমনিতেই শাকসবজি, ফলমূলসহ বাজারে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ ভোক্তা বেশি মূল্যে এসব পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় যদি আমদানিতে শুল্কারোপের ফলে চালের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পায়, তবে তা সার্বিক অর্থে সুখকর হবে না। কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় যেমন সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তেমন চালের দামও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যমূল্য নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। গত বছর বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে ধান উৎপাদন কম হওয়ায় চালের বাজার সহনীয় রাখতে সরকার আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে দেয়। সঙ্গত কারণেই আমদানি বেড়ে যায়। অতিরিক্ত আমদানি সত্ত্বেও কিন্তু পরবর্তীতে বাজারে চালের মূল্য কমেনি। সরকার কৃষককে স্বস্তি দিতে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্যও বাড়িয়েছে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী, আড়তদার ও মিলমালিকদের কারসাজিতে মূল্যবৃদ্ধির সুফল ভোগ করতে পারেননি কৃষক। তাই চাল আমদানির ওপর শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তে মুনাফালোভী ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা যে এর ফায়দা লুটবে না, তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। মজুদ বৃদ্ধি করে বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে অলীক সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা মূল্য বৃদ্ধি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে তৈরি করতে না পারে, তার দিকেও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেখা যায়, শুল্কারোপের ফলে কিছু ব্যবসায়ী আমদানি বন্ধ করে দেন এবং পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। এর ফলে চালের দাম বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। তাই শুল্কারোপের ফলে আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বাড়াতে না পারে, সেজন্য সরকারকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। চাল আমদানিতে শুল্কারোপের সিদ্ধান্তে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না, এটাই কাম্য।
Leave a Reply